ব্রয়লার মুরগি পালন ব্যবস্থাপনা || ব্রয়লার মুরগি পালনের সমস্ত তথ্য একসাথে
খামারে পালন করার জন্য মুরগির বাচ্চার যে বৈশিষ্ট্যগুলো থাকতে হবে সেগুলো নিচে দেওয়া হল-
১। একটি ভালো মানের –
- ব্রয়লার মুরগির বাচ্চার ওজন ৩৮ – ৪০ গ্রাম হয়ে থাকে।
- লেয়ার মুরগির বাচ্চার ওজন ৩৬ – ৩৮ গ্রাম হয়ে থাকে।
- সোনালি (ক্ল্যাসিক) মুরগির বাচ্চার ওজন ২৫ – ৩০ গ্রাম হয়ে থাকে।
- সোনালি (হাইব্রিড) মুরগির বাচ্চার ওজন ৩০ – ৩৬ গ্রাম হয়ে থাকে।
- হাঁসের বাচ্চার ওজন ৪০ – ৪৮ গ্রাম হয়ে থাকে।
- কোয়েল পাখির বাচ্চার ওজন ৬ – ৭ গ্রাম হয়ে থাকে।
২। ভালো মানের মুরগির বাচ্চা লম্বায় ১৭.৫ সেঃমিঃ হয়ে থাকে। ভালো মানের বাচ্চার ওজন ও আকারের মধ্যে সমতা থাকে।
৩। মুরগির ভালো মানের বাচ্চা ঝড়ঝড়ে, শুষ্ক ও কিচিরমিচির শব্দ করে থাকে।
৪। ভালো মানের মুরগির বাচ্চার আচরণ হবে সতর্কমূলক এবং শব্দের প্রতি সংবেদনশীল।
৫। ভালো মানের বাচ্চার নাভীর চারিপাশ শুষ্ক এবং ডাউন ফেদারবিহীন হবে না অর্থাৎ পশম থাকবে। ডাউনফেদার শুষ্ক, নরম এবং সমস্ত শরীরকে ঢেকে রাখবে।
৬। ভালো মানের বাচ্চার পায়ের অনাবৃত অংশ সচ্ছ এবং চকচকে হবে। হক জয়েন্ট ফোলা বা লাল হবেনা কিন্তু হলুদ হবে।
৭। ভালো বাচ্চার মৃত্যুর হার ১% বেশী হবে না এবং দ্বিতীয় সপ্তাহে তা ১.৫% এর বেশী হবেনা।
৮। বাচ্চার পা এবং ঠোট বাকা বা কোঁকড়ানো হবে না। এছাড়াও পায়ুপথ শুকনো হবে।
ব্রুডিং ব্যবস্থাপনাঃ
☞ব্রুডিং কি?
মুরগি বাচ্চা যখন জন্মগ্রহণ করে, তখন তার শরীরে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণকারী অংগগুলো অপূর্ণ থেকে যায়। ফলে সে তার নিজের শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনা। এই সময়টাতে বাচ্চাকে কৃত্রিম ভাবে কিংবা প্রাকৃতিক ভাবে মা মুরগির মাধমে তাপ দেয়ার ব্যবস্থাই হচ্ছে ব্রুডিং।
অন্যভাবে বলা যায়, একটি সদ্য জন্মানো মুরগির বাচ্চাকে ধাপে ধাপে বাহিরের পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়ানোর জন্য, ক্রমহ্রাসমান হারে যে তাপ প্রদান করা হয় তাকে ব্রুডিং বলে।
তবে বিশদভাবে বলতে গেলে, ব্রুডিং শুধুমাত্র তাপপ্রদান ব্যবস্থাই নয়, বরং এখানে নির্দিষ্ট বয়সে নির্দিষ্ট মাত্রায় তাপ দেওয়ার পাশাপাশি পর্যাপ্ত আলো-বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা, খাবার ও পানির ব্যবস্থা সর্বোপরি মুরগির বাচ্চার জন্য একটি অনুকূল ও আরামদায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করেতে হয়।
☞ব্রুডিং কতদিন করতে হয়?
আমাদের দেশের আবহাওয়ায় গ্রীষ্মকালে ব্রয়লার, সোনালী, লেয়ার মুরগি, হাঁস ও কোয়েল পাখির ক্ষেত্রে পরিবেশ ও বাচ্চার অবস্থার উপর ভিত্তি করে বয়স অনুযায়ী নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় ২ সপ্তাহ থেকে ৩ সপ্তাহ আর শীতকালে এ সময়সীমা আরো কিছুদিন বেড়ে যায়। সাধারণত শীতে ব্রয়লার, সোনালী, লেয়ার মুরগি, হাঁস ও কোয়েল পাখির ক্ষেত্রে ৩ সপ্তাহ থেকে ৪ সপ্তাহ পর্যন্ত ব্রুডিং করা উচিত।
☞ সঠিক ব্রুডিং এর উপকারিতাঃ
- বাচ্চার মৃত্যুর হার কম হয়।
- দ্রুত নাভী শুকাতে সঠিক ব্রুডিং ব্যবস্থাপনার ভূমিকা রয়েছে।
- বাচ্চার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
- শারীরিক গঠন সঠিকভাবে হয়।
- সঠিক বয়সে সর্বোচ্চ ওজন আসে।
- সঠিক সময়ে ডিমে আসে।
- ব্রুডারে সমান তাপমাত্রা থাকায় সকল বাচ্চার খাদ্য ও পানি গ্রহনের পরিমান সমান থাকায় সকল মুরগি সম-আকৃতির এবং সম-ওজনের হয়।
- বিভিন্ন ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা বেড়ে যায়।
- জীনগত বৈশিষ্ট্যের পূর্ণ বিকাশ ঘটে।
- সর্বোপরি প্রতিকুল আবহাওয়া থেকে বাচ্চাকে রক্ষা করে।
☞ সঠিক ব্রুডিং না করার ক্ষতিকর দিকসমূহঃ
- ব্রুডিং সঠিক না হলে বাচ্চার মৃত্যুহার বেড়ে যাবে।
- ব্রুডারে বাচ্চা সঠিক তাপমাত্রা না পেলে শক্তি হারাবে এবং দূর্বল হয়ে মারা যাবে।
- ব্রুডিং সঠিক না হলে বাচ্চা খাদ্য ও পানি কম খাবে।
- ব্রুডিং সঠিক না হলে বাচ্চার কাঙ্ক্ষিত ওজন আসবে না।
- ব্রুডিং সঠিক না হলে বাচ্চা থেকে সর্বোচ্চ প্রোডাকশন পাওয়া যাবে না।
- ব্রুডিং সঠিক না হলে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা সর্বোচ্চ হবে না।
- ব্রুডিং সঠিক না হলে বাচ্চার কুসুম সঠিকভাবে শোষিত হবে না। ফলে ই-কোলাই সহ অন্যান্য জীবাণু দ্বারা সহজেই আক্রান্ত হয়ে থাকে।
- ব্রুডিং সঠিক না হলে পরবর্তী পর্যায়ে বিভিন্ন সমস্যা দেয়া দিতে পারে। যেমনঃ প্রোল্যাপ্স, সঠিক সময়ে ডিমে না আসা, পিক প্রোডাকশন না পাওয়া।
☞ মুরগির বাচ্চা ব্রুডিং এর জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণঃ
সঠিকভাবে বাচ্চা ব্রুডিং এর জন্য বেশ কিছু উপকরণের সমন্বয় আবশ্যক। ব্রুডিং এর পরিবেশ ঠিক রাখতে নিম্নলিখিত উপকরণ গুলো প্রয়োজন হয়।
- চিকগার্ড
- হোবার
- লিটার
- পত্রিকা/কাগজ/পাটের বস্তা
- খাবার ও পানির পাত্র
- থার্মোমিটার
- আর্দ্রতা মিটার (হাইগ্রোমিটার)
- ইলেকট্রিক বাল্ব
১। চিক গার্ড কি?
বাচ্চা যাতে তাপের উৎস হতে দূরে সরে না যেতে পারে সেজন্য যে বেস্টনি বা বেড়া দেওয়া হয়-সেটাকেই চিকগার্ড বলে। আমাদের দেশে সাধারণত প্লেনশীট দিয়ে চিক গার্ড তৈরি করা হয়। তবে চাইলে চিক গার্ড হিসাবে কাগজের কার্টুন, বাঁশের চাটাইও ব্যবহৃত হয়। মোটকথা হচ্ছে- ব্রুডিং এর সময় বাচ্চাকে একটা গন্ডির মধ্যে আটকে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।
আদর্শ চিকগার্ড কেমন হওয়া উচিত?
- উচ্চতাঃ চিক গার্ড বেশী ছোট বা বেশী বড় দেওয়া যাবেনা। বেশী ছোট দিলে বাচ্চা পিষ্ট হয়ে মারা যাবে। আবার প্রয়োজনের তুলনায় বেশী বড় হলে বাচ্চা তাপের উৎস হতে দূরে সরে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পরবে। আদর্শ চিক গার্ডের উচ্চতা হচ্ছে ১৮ ইঞ্চি। তবে শীতের সময়ে চিক গার্ডের উচ্চতা ২৮ ইঞ্চি পর্যন্ত করা যেতে পারে।
- ব্যাস/ব্যাসার্ধঃ ৫০০ বাচ্চা ব্রুডিং এর জন্য একটি চিক গার্ডের ব্যাস হবে ১০-১২ ফুট অর্থ্যাৎ ব্যাসার্ধ হবে ৫-৬ ফুট।
- লম্বাঃ ৫০০ বাচ্চা ব্রুডিং এর জন্য একটি চিক গার্ড লম্বায় হবে প্রায় ৩২-৩৮ ফুট। যেটি গোলাকার করল প্রায় ব্যাস হবে ১০-১২ ফুট অর্থ্যাৎ ব্যাসার্ধ হবে ৫-৬ ফুট।
- ব্রুডারে বাচ্চার জায়গার পরিমাণঃ প্রথমাবস্থায় চিক গার্ডে প্রতিটি মুরগির বাচ্চার জন্য ০.২-০.৩ বর্গফুট জায়গা দিতে হবে। বাচ্চার বয়স ১ সপ্তাহ পার হলে এই জায়গার পরিমাণ দ্বিগুণ এবং ২ সপ্তাহ পার হলে জায়গার পরিমাণ তিন গুণ করে দিতে হবে।
২। হোবার কি?
যখন ব্রুডিং এ বাচ্চাকে তাপ দেয়া তখন তাপ যাতে উপরের দিকে উঠে না যায় সেজন্য বাল্বের উপর যে ঢাকনা ব্যবহার হয়, যার সাথেই বাল্ব সংযুক্ত থাকে সেটাই হচ্ছে হোবার। বাংলাদেশের বাজারে প্লেনশীটের তৈরি রেডিমেড ছোট আকারের যে হোবার গুলো পাওয়া যায় তার ব্যাস সাধারণত ৫ ফুট হয়। এরকম একটা হোবারে ৩০০-৫০০ টি বাচ্চা ব্রুডিং করা যায়। হোবার টি চিক গার্ডের ঠিক মাঝ বরাবর উপর থেকে রশি দিয়ে এমনভাবে স্থাপন করতে হয়, যেন রশি টেনে কপিকলের মতো হোবার টেনে উপরে-নিচে উঠা-নামা করানো যায়। চিক গার্ডের চারিদিকের প্রান্ত থেকে কেন্দ্রের দিকে হোবারের দূরত্ব হবে ২.৫-৩ ফুট।
৩। বাচ্চার বিছানা বা লিটারঃ
বাচ্চাকে একটি আরামদায়ক ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ দেওয়ার জন্য মুরগি রাখার ঘরের মেঝেতে যে উপাদান গুলো বিছিয়ে দেওয়া হয় সেটাকেই মুরগির বিছানা বা লিটার বলে। আমাদের দেশে সাধারণত ধানের তুষ লিটার হিসাবে সবচেয়ে বেশী ব্যবহার হয়। তবে লিটার হিসেবে বালু, কাঠের ভূষি, কাঠের বাকল, আখের ছোবড়া, ধান বা গমের খড়, বাদামের খোসা, ভূট্টা সংগ্রহরে পরে শুকনো গাছ, সরিষা সংগ্রহের পর গাছ ইত্যাদি ব্যবহার করা যায়। ব্রুডিং এ কাঠের ভূষি বা কাঠের গুঁড়া ব্যবহার না করাই উত্তম। এতে সহজের জমাট বাঁধা ও এমোনিয়া গ্যাস তৈরি হয়ে যায়। মোটকথা- লিটার হিসাবে এমন কিছু নির্ধারণ করতে হবে যা সহজেই আদ্রতা শোষণ করে নিতে পারে এবং শুকনো থাকে।
লিটারের পুরুত্ব কেমন হবে?
সাধারণত গ্রীষ্মকালে ২ ইঞ্চি পুরুত্বের লিটার আর শীতকালে ৩-৪ ইঞ্চি পুরুত্বের লিটার দিলেই যথেষ্ট। বিশেষ সতর্কতা- ব্রুডিং এ লিটার হিসাবে কাঠের ভূষি ব্যবহার করা কোন অবস্থাতেই ঠিক নয়।
৪। পত্রিকা/কাগজ/পাটের বস্তাঃ
ব্রুডিং এ ১ম দুই-তিন দিন বাচ্চাকে পুরাতন জীবানুমুক্ত খবরের কাগজের উপর খাবার ছিটিয়ে দিতে হয়। এসময় বাচ্চা খুব নাজুক থাকে বিধায় পাত্র হতে খাবার খাওয়ার উপযোগী থাকেনা। খবরের কাগজ ছাড়াও ব্রাউন পেপার বা যেকোন বড় কাগজ অথবা পাটের বস্তা ব্যবহার করা যায়।
৫। খাবার ও পানির পাত্রঃ
ব্রুডিং এ বাচ্চার খাবার ও পানির পাত্র তুলনামুলক ছোট ও কম উচ্চতার দিতে হবে। প্রতি ৪০-৫০টি বাচ্চার জন্য ১ টা খাবারের পাত্র (চিক ফিডার – ২.৫ ফুট লম্বা) এবং প্রতি ৪০-৫০ টি বাচ্চার জন্য ১ টি পানির পাত্র (২ লিটার পানি ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন) দিতে হবে। তা নাহলে বাচ্চা খাবার ও পানি খেতে প্রতিযোগীতার সম্মুখিন হবে এবং অপেক্ষাকৃত দূর্বল বাচ্চাগুলো খাবার খেতে পারবেনা বা অনেক সময় চাপে মারা যেতে পারে।
৬। থার্মোমিটারঃ
ব্রুডিং এর উপকরণ গুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে থার্মোমিটার। অথচ সস্তার এই গুরুত্বপূর্ণ উপকরণটি সম্পর্কে আমাদের দেশের খামারিরা খুবই উদাসীন। পোল্ট্রিতে সফলতার পূর্ব শর্ত যদি হয় ব্রুডিং; তাহলে ব্রুডিং এ সফল হওয়ার পূর্ব শর্ত হচ্ছে তাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা। আর তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য থার্মোমিটারে মেপে দেখা আবশ্যক। বাজারে পেটশপ বা ভেটেরিনারি শপ গুলোতে খুব স্বল্পমূল্যে কাঠের বা প্ল্যাস্টিকের ফ্রেমের থার্মোমিটার অথবা উন্নতমানের ডিজিটাল টেম্পারেচারমিটার (এগুলোতে একই সাথে তাপমাত্রা, আর্দ্রতা দেখা যায়) পাওয়া যায়।
৭। হাইগ্রোমিটারঃ
ব্রুডিং এ আদ্রতা পরিমাপের জন্য হাইগ্রোমিটার বা আদ্রতা পরিমাপক ব্যবহার করতে হয়। হাইগ্রোমিটার হিসাবে আমাদের দেশে যে ডিভাইস গুলো পাওয়া যায় তা- এইচটিসি-১, এইচটিসি-২, হিউমিডিটি মিটার ইত্যাদি নামে পরিচিত। এগুলো দিয়ে একই সাথে ব্রুডিং ঘরের তাপমাত্রা ও আদ্রতা পরিমাপ করে প্রয়োজনে কম বা বেশী করে নিতে হয়।
৮। ইলেকট্রিক বাল্বঃ
ব্রুডিং এ বয়স অনুযায়ী সঠিক তাপমাত্রা পেতে ব্রুডারের হোবারে নির্দিষ্ট পয়েন্টে ইলেকট্রিক বাল্ব লাগানো হয়। সাধারণত হিটের উৎস হিসেবে ফিলামেন্ট বা ইনক্যান্ডেসসেন্ট বা নরমাল লাল আলোর বাল্ব ব্যবহৃত হয়। তবে বর্তমানে বিদ্যুৎ খরচ কমাতে উন্নতমানের ইনফ্রারেড ও সিরামিক হিট বাল্ব বাজারে পাওয়া যায়, যা প্রায় একই বিদ্যুৎ খরচে ৭-১০ গুন বেশি তাপ উৎপন্ন করত সক্ষম।
১ টা ৫০০ বাচ্চার ব্রুডারে সাধারণত ২০০ ওয়াটের ৪ টা নরমাল লাল আলোর বাল্ব লাগাতে হয়। অন্যদিকে ইনফ্রারেড হিট বাল্ব ব্যবহার করলে মাত্র ১ টি ২০০ ওয়াটের ইনফ্রারেড এবং ১ টা নরমাল ১০০ ওয়াটের বাল্বই যথেষ্ট।
তবে, প্রকৃতঅর্থে ব্রুডিং এ বাল্বের সংখ্যা বা ওয়াট দিয়ে বিবেচনা করা উচিত নয়। ব্রুডিং এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে নির্দিষ্ট বয়সে নির্দিষ্ট তাপমাত্রা প্রদান। এবং এই তাপমাত্রা বজায় রাখতে যত ওয়াট অথবা যতটি বাল্বই দরকার হোক না কেন; তত ওয়াট বা ততগুলো বাল্বই সেট করতে হবে। প্রয়োজনে হোবারের উচ্চতা কমিয়ে বাড়িয়ে তাপমাত্রা এডজাস্ট করতে হবে।
১। প্রথমেই যে জায়গায় ব্রুডিং করা হবে সেখানে ২-৩ ইঞ্চি পুরো করে জীবাণুমুক্ত লিটার বিছিয়ে নিতে হবে। ব্রুডিং এ লিটার হিসাবে ধানের তুষ সবচেয়ে ভাল। ভুল করেও ব্রুডিং এ লিটার হিসাবে কাঠের গুড়া দেয়া যাবে না। লিটার হিসাবে কাঠের গুড়া খুবই ক্ষতিকর। কাঠের গুড়ার কণাগুলো অতিক্ষুদ্র হওয়ায় তা বাতাসে উড়ে এবং বাচ্চার নাক মুখ দিয়ে প্রবেশ করে ইনফেকশন সৃষ্টি করে। ফলে বাচ্চা সর্দি ও নিউমোনিয়া রোগে ভুগে। ব্রুডিং এ কাঠের গুড়া ব্যবহার অনুচিত। ধানের তুষ না পাওয়া গেলে পরিবর্তে চটের বস্তা ব্যবহার করা যেতে পারে।
২। তুষ বিছানোর পর বাচ্চার পরিমাণ অনুপাতে চিকগার্ড বসাতে হবে। চিকগার্ড বসানোর পর জীবাণুমুক্ত পুরাতন খবরের কাগজ একটা একটা করে স্তরে স্তরে বিছিয়ে দিতে হবে। এভাবে ৬-৮টি পত্রিকার স্তর তৈরি করা যেতে পারে। এভাবে স্তরে স্তরে বিছানোর কারন হচ্ছে একটা স্তর যখন নোংরা হয়ে যাবে, তখন উপর হতে পত্রিকার ১ম স্তরটি উঠিয়ে ফেললে নিচের পরিষ্কার পত্রিকার ২য় স্তর বেরিয়ে আসবে। এভাবে ব্রুডারের পরিচর্যা করা সহজ হয়। বাচ্চা ব্রুডারে আনার অন্তত ১-২দিন আগে ব্রুডার সেটআপ করে রাখতে হবে।
৩। বাচ্চার পরিমাণের অনুপাতে হোবার সেট করতে হবে। প্রয়োজনীয় তাপমাত্রা অর্থাৎ ৩৫ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপ যাতে হয় সে অনুযায়ী হোবারে বাল্ব দিতে হবে। বাচ্চা ব্রুডারে দেওয়ার অন্তত ২-৪ ঘন্টা আগে হোবার জ্বালিয়ে রাখতে হবে। আগেই নিশ্চত হতে হবে যাতে প্রয়োজনীয় পরিমাণ তাপ উৎপন্ন হয়।
৪। বাচ্চা আনার ২-১ দিন আগেই খাবার ও পানির পাত্র জীবানুনাশক যেমনঃ টিমসেন, জিপিসি-৮, ভাইরোসিড, পভিসেপ-১০%, পটাশ, ভারকন এস, ফার্ম-৩০ ইত্যাদি মেশানো পানি দিয়ে ধুয়ে রোদে শুকিয়ে রেডি রাখতে হবে।
৫। ব্রুডিং এ চিক গার্ডের ভিতরে একপাশে ভূমি হতে ২-৩ ইঞ্চি উপরে থার্মোমিটার ঝুলিয়ে রাখতে হবে। সতর্কতাঃ বেশী উপরে বা বেশী নিচে এবং হোবারের ঠিক নিচে থার্মোমিটার রাখা যাবেনা। তাহলে সঠিক তাপ পরিমাপ করা সম্ভব হবেনা।
৬। ব্রুডিং ঘরের আদ্রতা পরিমাপের জন্য ঘরের একপাশে হাইগ্রোমিটার ঝুলিয়ে রাখতে হবে। আদ্রতা কম হলে ঘরে ১ টা গামলা বা বালতিতে পানি ভরে রাখলে আদ্রতা বেড়ে যাবে। সাধারণত বর্ষাকালে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত হলে এবং লিটার অতিরিক্ত ভিজে গেলে আদ্রতা অতিরিক্ত বেড়ে যায়। সেক্ষেত্রে লিটার পরিবর্তন করে নতুন লিটার দিলে আদ্রতা স্বাভাবিক হয়ে যায়।
৭। শীতকালে ব্রুডিং এ প্রয়োজনীয় তাপ পেতে অনেকে ব্রুডারের উপরাংশ ঢেকে দেয়। যা অনেক বড় একটা ভুল। এমনটা কখনোই করা যাবেনা। প্রয়োজনে বাল্ব বাড়িয়ে দিয়ে তাপ বাড়াতে হবে।
ব্রয়লার মুরগির বাচ্চার ব্রুডিং তাপমাত্রাঃ
বয়স (সপ্তাহ) | তাপমাত্রা (ডিগ্রি সেলসিয়াস) | তাপমাত্রা (ডিগ্রি ফারেনহাইট) |
১ম সপ্তাহ | ৩৫ ডিগ্রি | ৯৫ ডিগ্রি |
২য় সপ্তাহ | ৩২.২ ডিগ্রি | ৯০ ডিগ্রি |
৩য় সপ্তাহ | ২৯.৫ ডিগ্রি | ৮৫ ডিগ্রি |
৪র্থ সপ্তাহ | ২৭.৬ ডিগ্রি | ৮০ ডিগ্রি |
৫ম সপ্তাহ | ২৩.৮৮ ডিগ্রি | ৭৫ ডিগ্রি |
সাধারনত ২ সপ্তাহের বেশি ব্রুডিং করা লাগে না। তবে শীতের দিনে ব্রুডিং প্রায় চার-পাঁচ সপ্তাহ পর্যন্ত করতে হয়। ব্রুডিং তাপমাত্রার গোপন কথা হচ্ছে যে, ব্রুডিং যত সপ্তাহই করা লাগুক না কেন। প্রথম সপ্তাহের যে তাপমাত্রা দেয়া লাগে। এরপরে প্রতি সপ্তাহে ৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট করে কমাতে হবে।
বাচ্চা পরিবহন করে খামারে নিয়ে আসার পরে বাচ্চা ব্রুডারে ছাড়ার সময় আপনাকে বিশেষ সতর্কতা মানতে হবে-
১। ব্রুডারের সমস্ত প্রয়োজনীয় জিনিস যেমন লিটার পেপার, চিকগার্ড, পানি, হোভার, খাবারের পাত্র সব তিন ঘন্টা আগেই বসিয়ে নিতে হবে যথাযথ স্থানে।
২। হোভারের লাইট দুই-তিন ঘন্টা আগেই জ্বালিয়ে নিন এবং একঘন্টা পর থার্মোমিটারের রিডিং পরীক্ষা করতে হবে।
৩। বাচ্চা আসার আধঘন্টা আগে পানিতে দ্রবণীয় কোন প্রোবায়েটিক দিয়ে ব্রুডারের চারপাশে এবং ভিতরে পেপারে হালকা স্প্রে করে দিতে হবে।
৪। বাচ্চা আসার ১০ মিনিট আগেই পানির পাত্র এবং খাবার পাত্র যথাযথ জায়গায় বসিয়ে দিতে হবে।
৫। বাচ্চা আসার পর বাচ্চার বক্স সহ কিছুক্ষণ শেডের মধ্যে রেখে দিতে হবে। বাচ্চা এনেই তড়িঘড়ি করে ছেড়ে দেয়া যাবে না। প্রথমে বাচ্চার কার্টুন ব্রুডার ঘরে ১০-১৫ মিনিট রাখতে হবে। এতে করে বাচ্চা গুলা ব্রুডারের তাপমাত্রার সাথে নিজেদের মানিয়ে নিতে পারে।
৬। তারপর বাচ্চাসহ প্রতিটি বক্সের ওজন করুন এবং খাতায় লিপিবদ্ধ করতে হবে। বক্স নম্বর সহ পরবর্তীতে খালি বক্সের ওজন বাদ দিলে একদিনের বাচ্চার ওজন পাওয়া যাবে।
৭। এর পর প্রতিটি ব্রুডারে গুনে গুনে বাচ্চা ছেড়ে দিতে হবে এবং বাচ্চার অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
৮। যদি বাচ্চা দুর্বল থাকে তা হলে পৃথক করতে হবে এবং ভিটামিন-সি ও গ্লুকোজের পানি ফোটায় ফোটায় খাওয়াতে হবে।
৯। বাচ্চা সবল থাকলে প্রথম দুই ঘন্টা শুধুমাত্র জীবানুমুক্ত সাদা পানি দিতে হবে। বাচ্চা দুর্বল থাকলে গ্লুকোজের পানি দিতে হবে। এছাড়া বাচ্চাকে সুস্থ রাখতে প্রথম ৩ দিন প্রোবায়োটিক ব্যবহার করা যেতে পারে।
১০। বাচ্চা আসার ১০ মিনিট পর খাবার দিন এক্ষেত্র শুধুমাত্র প্রথমবার পেপারে ছিটিয়ে দিবেন এবং এর পর থেকে অবশ্যই ট্রেতে খাবার দিতে হবে। বাচ্চা সুস্থ-সবল থাকলে খাবার ও পানি এক সাথেই দেয়া যেতে পারে।
১১। একঘন্টা পর অন্তত ১০% বাচ্চার খাবারের থলি পরীক্ষা করতে হবে। বাচ্চার পায়ের তলা আপনার গালে লাগিয়ে দেখুন কুসুম গরম আছে কিনা। যদি থাকে তা হলে বুঝবেন বাচ্চার ব্রুডিং যথাযথ হচ্ছে।
১২। দুইঘন্টা পর চাইলে ভিটামিন-সি ও গ্লুকোজের পানি দিতে পারেন, সাদা পানি দিলেও চলবে।
১৩। বাচ্চার অবস্থা ৩ ঘন্টা পরপর পর্যবেক্ষণ করতে হবে তাপ বেশী হচ্ছে কিনা। কোন সমস্যা থাকলে সমাধান করতে হবে এবং বাচ্চা মৃত থাকলে সরিয়ে ফেলতে হবে। খাবার পানি শেষ হলে খাবার পানি দিতে হবে। পেপার ভিজে গেলে পাল্টে দিতে হবে।
১৪। ২৪ ঘন্টা পর পেপার সম্পূর্ন ভাবে সরিয়ে ফেলবেন। পর্দা হালকা নামিয়ে গ্যাস বের করে দিতে হবে।
বয়স অনুযায়ী ব্রয়লার মুরগির খাবার ও পানির পাত্রের সংখ্যা (১০০০ মুরগির জন্য)ঃ
বয়স (দিন) | খাবার পাত্রের সংখ্যা | পানির পাত্রের সংখ্যা |
১-৭ দিন | ১০-১৫ টি | ১০-১৫ টি |
৮-১৪ দিন | ২০-২৫ টি | ২০-২৫ টি |
১৫-২১ দিন | ৩০-৩৫ টি | ৩০-৩৫ টি |
২২-২৮ দিন | ৩৫-৪০ টি | ৩৫-৪০ টি |
২৯ দিন এর অধিক | ৪৫ টি | ৪৫ টি |
বয়স ও সিজন অনুযায়ী ব্রয়লার মুরগির প্রয়োজনীয় জায়গার পরিমাণঃ
গ্রীষ্মকাল | |
বয়স (দিন) | বর্গফুট/বাচ্চা |
১-৩ দিন | ০.৩০ বর্গফুট |
৪-৭ দিন | ০.৪৫ বর্গফুট |
৮-১১ দিন | ০.৬০ বর্গফুট |
১২-১৫ দিন | ০.৮৫ বর্গফুট |
১৬ দিন এর অধিক | ১.২৫ বর্গফুট |
শীতকাল | |
বয়স (দিন) | বর্গফুট/বাচ্চা |
১-৩ দিন | ০.২০ বর্গফুট |
৪-৭ দিন | ০.৪০ বর্গফুট |
৮-১১ দিন | ০.৫০ বর্গফুট |
১২-১৫ দিন | ০.৬০ বর্গফুট |
১৬-২০ দিন | ০.৭০ বর্গফুট |
২০ দিন এর অধিক | ১.২০ বর্গফুট |
বয়স অনুযায়ী ব্রয়লার মুরগির দৈনিক খাদ্য গ্রহন, মোট খাদ্য গ্রহন, পানি গ্রহন, ওজন এবং এফসিআর চার্টঃ
বয়স (দিন) | দৈনিক খাদ্য গ্রহন (গ্রাম/মুরগি) | মোট খাদ্য গ্রহন (গ্রাম/মুরগি) | দৈহিক ওজন (গ্রাম/মুরগি) | খাদ্য রূপান্তর হার (এফসিআর) | দৈনিক পানি গ্রহন (মিলি/মুরগি) |
১ দিন | ১৫ | ১৫ | ৪৫ | ০.২৫ | ৩০ |
২ দিন | ১৮ | ৩৩ | ৭৬ | ০.৪৩ | ৩৫ |
৩ দিন | ২২ | ৫৫ | ৯৬ | ০.৫৭ | ৪৫ |
৪ দিন | ২৪ | ৭৯ | ১১৮ | ০.৬৭ | ৫০ |
৫ দিন | ২৭ | ১০৬ | ১৩৭ | ০.৭৭ | ৫৫ |
৬ দিন | ৩২ | ১৩৮ | ১৬৬ | ০.৮৩ | ৬৫ |
৭ দিন | ৩৫ | ১৭৩ | ১৯৭ | ০.৮৮ | ৭০ |
৮ দিন | ৪০ | ২১৩ | ২২৯ | ০.৯৩ | ৮০ |
৯ দিন | ৪৪ | ২৫৭ | ২৬৫ | ০.৯৭ | ৯০ |
১০ দিন | ৪৮ | ৩০৫ | ৩০৫ | ১.০০ | ১০০ |
১১ দিন | ৫৩ | ৩৫৮ | ৩৪৭ | ১.০৩ | ১১০ |
১২ দিন | ৫৭ | ৪১৫ | ৩৯১ | ১.০৬ | ১২০ |
১৩ দিন | ৬২ | ৪৭৭ | ৪৩৮ | ১.০৯ | ১৩০ |
১৪ দিন | ৬৮ | ৫৪৫ | ৪৯১ | ১.১১ | ১৪০ |
১৫ দিন | ৭৩ | ৬১৮ | ৫৪২ | ১.১৪ | ১৫০ |
১৬ দিন | ৭৮ | ৬৯৬ | ৬০০ | ১.১৬ | ১৬০ |
১৭ দিন | ৮৪ | ৭৮০ | ৬৬১ | ১.১৮ | ১৭০ |
১৮ দিন | ৯০ | ৮৭০ | ৭১৯ | ১.২১ | ১৮০ |
১৯ দিন | ৯৬ | ৯৬৬ | ৭৮৫ | ১.২৩ | ১৯০ |
২০ দিন | ১০২ | ১০৬৮ | ৮৫৫ | ১.২৫ | ২১০ |
২১ দিন | ১০৮ | ১১৭৬ | ৯২৫ | ১.২৭ | ২৩০ |
২২ দিন | ১১৪ | ১২৯০ | ১০০০ | ১.২৯ | ২৫০ |
২৩ দিন | ১২০ | ১৪১০ | ১০৭৫ | ১.৩১ | ২৭০ |
২৪ দিন | ১২৬ | ১৫৩৬ | ১১৫৫ | ১.৩৩ | ২৯০ |
২৫ দিন | ১৩৩ | ১৬৬৯ | ১২৩৬ | ১.৩৫ | ৩১০ |
২৬ দিন | ১৩৯ | ১৮০৮ | ১৩২০ | ১.৩৭ | ৩৩০ |
২৭ দিন | ১৪৫ | ১৯৫৩ | ১৪০৫ | ১.৩৯ | ৩৬০ |
২৮ দিন | ১৫১ | ২১০৪ | ১৪৮২ | ১.৪২ | ৩৯০ |
২৯ দিন | ১৫৬ | ২২৬০ | ১৫৭০ | ১.৪৪ | ৪১০ |
৩০ দিন | ১৬২ | ২৪২২ | ১৬৭০ | ১.৪৫ | ৪৩০ |
৩১ দিন | ১৬৮ | ২৫৯০ | ১৭৬২ | ১.৪৭ | ৪৫০ |
৩২ দিন | ১৭৩ | ২৭৬৩ | ১৮৬৭ | ১.৪৮ | ৪৭০ |
৩৩ দিন | ১৭৮ | ২৯৪১ | ১৯৭৪ | ১.৪৯ | ৪৮০ |
৩৪ দিন | ১৮৪ | ৩১২৫ | ২০৮৩ | ১.৫০ | ৪৯০ |
৩৫ দিন | ১৮৮ | ৩৩১৩ | ২২০৯ | ১.৫০ | ৫০০ |
বিঃদ্রঃ উপরোক্ত চার্ট টি বিভিন্ন বাচ্চা উৎপাদনকারী কোম্পানির ম্যানুয়াল এবং ফিল্ড থেকে সংগৃহীত ডাটার উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। বাচ্চার জাত, বাচ্চার কোয়ালিটি, ফিডের কোয়ালিটি, ফার্মের ম্যানেজমেন্ট, বায়োসিকিউরিটি, পরিবেশ এবং সর্বোপরি রোগবালাইয়ের কারনে চার্টে উল্লেখিত ডাটার মান বয়স অনুযায়ী কম-বেশি হতে পারে। চার্ট টি শুধুমাত্র একটা সম্যক ধারণা দেয়ার উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে।
খাবার ও পানি ব্যবস্থাপনাঃ
সাধারণত মার্কেটে ব্রয়লার মুরগির ৩ ধরণের খাদ্য পাওয়া যায়।
- ব্রয়লার স্টার্টার ফিড
- ব্রয়লার গ্রোয়ার ফিড
- ব্রয়লার ফিনিশার ফিড
বয়স অনুযায়ী মুরগির খাদ্যের ধরণে পরিবর্তন হয়ে থাকে। নির্দিষ্ট বয়সে মুরগির দৈহিক পুষ্টি চাহিদার উপর ভিত্তি করে নির্দিষ্ট আকার, আকৃতি এবং পুষ্টিমানসম্পন্ন ফিড তৈরি করা হয়ে থাকে। তাই সর্বোচ্চ ভালো ফলাফল পেতে মুরগিকে তার বয়স অনুযায়ী নির্দিষ্ট ধরণের খাদ্য প্রদান করা উচিত।
খাদ্যের নাম | খাদ্য প্রদানের বয়স | উক্ত সময়ে সম্ভাব্য ওজন | খাদ্যের ধরণ |
ব্রয়লার স্টার্টার ফিড | ১ – ১৪ দিন পর্যন্ত | ৫০০ গ্রাম পর্যন্ত | ক্রাম্বল |
ব্রয়লার গ্রোয়ার ফিড | ১৫ – ২৪ দিন পর্যন্ত | ৫০০-১১৫০ গ্রাম পর্যন্ত | পিলেট |
ব্রয়লার ফিনিশার ফিড | ২৫ দিন থেকে বিক্রয় পর্যন্ত | ১১৫০ গ্রাম থেকে শেষ পর্যন্ত | পিলেট |
ব্রয়লার মুরগিতে খাদ্য প্রদানে সতর্কতাঃ
- ব্রয়লার মুরগির ক্ষেত্রে পাত্রে সার্বক্ষনিক খাদ্য থাকা উচিত। পাত্রের খাদ্য শেষ হবার আগেই আবার খাদ্য প্রদান করতে হবে। তবে মনে রাখতে হবে যে, খাদ্য একবারে পাত্র পরিপূর্ণ করে না দিয়ে পাত্রে কিছুটা খালি জায়গা রাখতে হবে। এতে খাদ্যের অপচয় কম হবে। চেষ্টা করতে হবে বার বার ফ্রেশ খাবার প্রদান করতে।
- মুরগির সেডে খাদ্যের পাত্র মুরগির পিঠ বরাবর উঁচুতে সেট করতে হবে। পাত্র খুব বেশি উঁচুতে সেট করলে মুরগি খাদ্য নাগাল না পেলে খাদ্য গ্রহন কমে যেতে পারে। পাশাপাশি খাদ্যের পাত্র খুব বেশি নিচেও সেট করা যাবে। এতে খাদ্যের অপচয় হতে পারে।
- হুট করেই মুরগির খাদ্য পরিবর্তন করা যাবে না। ব্রয়লার স্টার্টার থেকে গ্রোয়ার অথবা গ্রোয়ার থেকে ফিনিশারে যাওয়ার আগে অবশ্যই ৩ দিন খাদ্য মিক্সিং করে খাওয়াতে হবে।
খাদ্য পরিবর্তনের সময় মিক্সিং পদ্ধতিঃ
ব্রয়লার স্টার্টার থেকে ব্রয়লার গ্রোয়ারে যাওয়ার সময় ফিড পরিবর্তনে মিক্সিং এর নিয়মঃ
সময় (দিন) | ব্রয়লার স্টার্টার | ব্রয়লার গ্রোয়ার |
১ম দিন | ৭৫% | ২৫% |
২য় দিন | ৫০% | ৫০% |
৩য় দিন | ২৫% | ৭৫% |
৪র্থ দিন | দেয়া লাগবে না | ১০০% |
ব্রয়লার গ্রোয়ার থেকে ব্রয়লার ফিনিশারে যাওয়ার সময় ফিড পরিবর্তনের মিক্সিং এর নিয়মঃ
সময় (দিন) | ব্রয়লার গ্রোয়ার | ব্রয়লার ফিনিশার |
১ম দিন | ৭৫% | ২৫% |
২য় দিন | ৫০% | ৫০% |
৩য় দিন | ২৫% | ৭৫% |
৪র্থ দিন | দেয়া লাগবে না | ১০০% |
বিঃদ্রঃ খাদ্য পরিবর্তনের সময় অবশ্যই উক্ত নিয়মে খাদ্য মিক্সিং করে পরিবর্তন করতে হবে।
পানি ব্যবস্থাপনাঃ
- মুরগিকে সুস্থ-সবল রাখতে এবং সর্বোচ্চ উৎপাদন পেতে সর্বদা আয়রন ও জীবাণুমুক্ত পরিষ্কার পানি প্রদান করতে হবে।
- সাধারণত মুরগি যতটুকু খাদ্য খায়; তার প্রায় ২-২.৫ গুন পানি পান করে থাকে।
- চার্টে উল্লেখিত বয়স অনুযায়ী মুরগিকে পর্যাপ্ত পরিমানে পরিষ্কার পানির পাত্র দিতে হবে। পানির পাত্র প্রয়োজনের তুলনায় কম হলে মুরগির পারফর্মেন্স ভাল হবে না।
- দৈনিক ৪-৫ বার জীবাণুমুক্ত পানি প্রদান করতে হবে। অতিরিক্ত পানি থাকলেও তা ফেলে দিয়ে নতুন পানি দিতে হবে।
- পানি পড়ে যেন লিটার ভিজে না যায়, সেজন্য পানির পাত্র একটু উঁচু জায়গায় ইট বা কাঠের উপরে সেট করতে হবে।
- অনেক সময় পানির পাত্র লিটার (তুষ) এবং মুরগির পায়খানা পড়ে থাকতে দেখা যায়। ক্ষেত্রে অবশ্যই উক্ত ময়লাযুক্ত পানি ফেল নিয়ে ফ্রেশ নতুন পানি দিতে হবে।
- পানির পাত্র অথবা পানির পাইপ এবং পানির লাইন নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে।
ব্রয়লারের ভ্যাক্সিনেশন শিডিউলঃ
বয়স (দিন) | ভ্যাকসিনের নাম | যে রোগের বিরুদ্ধে কাজ করবে | প্রয়োগ পদ্ধতি |
৩-৫ দিন | রাণীক্ষেতের লাইভ ভ্যাকসিন | রাণীক্ষেত | ১ চোখে ১ ফোঁটা (কোম্পানির নির্দেশনা মোতাবেক) |
৯-১১ দিন | গামবোরো রোগের লাইভ ভ্যাকসিন (ইন্টারমিডিয়েট স্ট্রেইন) | গামবোরো | ১ চোখে ১ ফোঁটা (কোম্পানির নির্দেশনা মোতাবেক) |
১৬-১৮ দিন | গামবোরো রোগের লাইভ ভ্যাকসিন (ইন্টারমিডিয়েট প্লাস স্ট্রেইন) | গামবোরো | চোখে বা খাবার পানিতে মিশিয়ে |
২১-২২ দিন | রাণীক্ষেতের লাইভ ভ্যাকসিন | রাণীক্ষেত | চোখে বা খাবার পানিতে মিশিয়ে |
বিঃদ্রঃ ভ্যাকসিন শিডিউল কখনো ধ্রুব হতে পারেনা। নির্দিষ্ট এলাকায় রোগের প্রকোপ এবং মুরগির শারীরিক অবস্থার উপর নির্ভর করে এলাকাভেদে ভ্যাকসিনেশন শিডিউল ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। এক্ষেত্রে উক্ত এলাকার একজন রেজিস্টার্ড ভেটেরিনারিয়ানের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে আপনার ফার্মের জন্য ভ্যাকসিন শিডিউল তৈরি করিয়ে নিতে পারেন।
পোল্ট্রি খামারের ভ্যাকসিন প্রয়োগের ক্ষেত্রে যেসব বিষয় বিবেচনা করতে হবে সেগুলো নিচে বিস্তারিত দেওয়া হল-
১। সুস্থ-সবল বাচ্চাকে ভ্যাকসিন দিতে হবে। অসুস্থ-রোগাক্রান্ত বাচ্চাকে ভ্যাকসিন করানো উচিত নয়।
২। ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী কোম্পানির নির্দেশনা অনুযায়ী ভ্যাকসিন প্রদান করতে হবে।
৩। ভ্যাকসিন অবশ্যই বরফের ফ্ল্যাক্সে করে কুল-চেইন বজায় রেখে পরিবহন করে নিয়ে আসতে হবে।
৪। পোল্ট্রি খামারে প্রয়োগের জন্য ভ্যাকসিন অবশ্যই ঠাণ্ডা পরিবেশে রাখতে হবে। কোনভাবেই সূর্যের আলো কিংবা অধিক তাপমাত্রাযুক্ত স্থানে ভ্যাকসিন রাখা যাবে না। এতে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
৫। গরমের দিনে হাত দিয়ে বেশিক্ষন ভ্যাকসিন ধরে রাখা যাবে না। এতে হাতের তাপমাত্রা ভ্যাকসিনের কার্যক্ষমতার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
৬। ভ্যাকসিন প্রয়োগের আগে অবশ্যই হাত ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি জীবাণুমুক্ত করতে হবে। এর আগে ভ্যাকসিন ব্যবহার করা উচিত নয়।
৭। ভ্যাকসিন প্রয়োগের আগে বা পরবর্তী দুইদিন কোন বিশের প্রয়োজন ছাড়া এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা ঠিক নয়।
৮। পোল্ট্রি খামারের জন্য ভ্যাকসিন কেনা বা ব্যবহারের সময় ভালোভাবে দেখতে হবে মেয়াদ আছে কিনা। মেয়াদ উত্তীর্ণ ভ্যাকসিন কোনভাবেই খামারে প্রয়োগ করা উচিত না।
৯। ভ্যাকসিন বাইরে নিয়ে আসার পর ২ ঘন্টার মধ্যেই ব্যবহার করতে হবে। তা না হলে কার্যকারিতা নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে।
১০। খামারে মুরগির সংখ্যা অনুযায়ী পর্যাপ্ত পরিমানে ভ্যাকসিন দিতে হবে। অপর্যাপ্ত পরিমানে ভ্যাকসিন করানো যাবে না। প্রয়োজনের তুলনায় ১০% বেশি ভ্যাকসিন দিতে পারলে ভালো। যেমনঃ খামারে ৯০০ মুরগি থাকলেও ১০০০ ডোজের ভ্যাকসিন দিতে হবে। তবে কখোনোই ১১০০ মুরগিকে ১০০০ ডোজের ভ্যাকসিন করানো উচিত নয়। এক্ষেত্রে প্রয়োজনে ১৫০০ ডোজের ভ্যাকসিন করাতে হবে।
১১। ভ্যাকসিন করানোর পরে ভ্যাকসিনের ভায়াল গুলো আশেপাশে ফেলে না দিয়ে অথবা জমিয়ে না রেখে সরাসরি মাটির নিচে পুঁতে ফেলুন কিংবা আগুনে পুড়িয়ে ফেলুন।
মুরগির গ্রীষ্মকালীন যত্ন
ঋতু ভেদে মুরগির যত্ন নেয়া জরুরি। কারন ঋতু বা আবহাওয়া পরিবর্তনের সাথে মুরগির উৎপাদন, রোগ-বালাই ও তাদের স্বাস্থ্যের পরিবর্তন হতে পারে।
প্রচন্ড গরমে মুরগির জন্য বিশেষ কিছু যত্ন নিতে হবে।
- গরমে খামারে বৈদ্যুতিক ফ্যানের ব্যবস্থা করতে হবে।
- খামারের ভেতর দিকে চালার নিচে সিলিং লাগাতে হবে। যাতে ঘরের ভিতরে রোদের তাপ সরাসরি প্রবেশ করে খামারের ভিতরের পরিবেশ উত্তপ্ত করতে না পারে।
- এছাড়া খামারের চালার উপরে পাটের চট বা গাছের ডাল পালা দিয়ে টিন ঢেকে দিলে ও সূর্যের তাপ সরাসরি খামারে লাগবে না।
- গরমের দিনে পাখিকে যথাসম্ভব ঠান্ডা ও পরিস্কার পানি সরবরাহ করতে হবে।
- পানির সাথে গ্লুকোজ, বিটেইন যুক্ত স্যালাইন ও ভিটামিন-সি মিশিয়ে দিতে হবে।
- খামারের চারিপাশ খোলামেলা রাখতে হবে।যাতে বাতাস চলাচল করতে পারে।
- দুপুরের দিকে যদি অসহনীয় তাপ থাকে তবে ঠান্ডা পানি অল্প করে পাখির গায়ে স্প্রে করে দিতে পারেন।
মুরগির শীতকালীন যত্ন
শীতের সময় খুব সতর্কতার সাথে মুরগির যত্ন নিতে হবে। কারন এসময় তাদের জন্য প্রয়োজনীয় তাপমাত্রা বজায় না থাকলে মুরগি মারা যেতে পারে।
শীতে মুরগির বিশেষ কিছু যত্ন-
- প্রথমত তাদের জন্য প্রয়োজনীয় তাপ প্রদান করতে হবে।তাপমাত্রা বজায় রাখার জন্য বৈদ্যুতিক বাল্ব, ইনফ্রারেড হিট বাল্ব, কয়লার হিটার, গ্যাস ব্রুডার ব্যবহার করতে হবে।
- সম্ভব হলে ঠান্ডা পানির বদলে হাল্কা কুসুম গরম পানি পান করতে দিন।
- ঠান্ডা লেগে গেলে রেজিস্টার্ড ভেটেরিনারি ডাক্তারের পরামর্শক্রমে চিকিৎসা করাতে হবে।
- খামার পর্দা দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে।যাতে ভেতরে কুয়াশা প্রবেশ না করতে পারে। খামারের চারিদিকে পর্দা লাগানোর সিস্টেম থাকতে হবে। তবে পর্দার সিস্টেম এমন হতে হবে যেন–পর্দা দেয়ালের নিচ থেকে খামারের ভেতর থেকে রশি দিয়ে টেনে টেনে উপরের দিকে তোলা যায়। অর্থাৎ পর্দা উপর থেকে নয়; নিচ থেকে লাগাতে হবে। কারন খামারের সৃষ্ট গ্যাস হালকা বলে তা উপর দিয়ে বের হবে কিন্তু উপরে যদি পর্দা দিয়ে আটকানো থাকে তবে গ্যাস বের হতে পারে না।
- রোদ উঠলে পর্দা সরিয়ে দিতে হবে যাতে খামারে সূর্যের আলো প্রবেশ করতে পারে।
যেকোনো খামারের সাফল্যের পিছনে বায়োসিকিউরিটি বা জৈব–নিরাপত্তা বিশেষ ভূমিকা রাখে। কারন জৈব নিরাপত্তা মেনে চললে খামারে রোগ–বালাই হওয়ার প্রবণতা কম থাকে। তাই সঠিকভাবে খামারের বায়োসিকিউরিটি বজায় রাখতে পারলে খামার করে সফল হওয়া সম্ভব।
খামার ঘর প্রস্তুত করা থেকে শুরু করে বাচ্চা সংগ্রহ, বাচ্চা লালন–পালন এবং উৎপাদন ও বিক্রয় পর্যন্ত সকল ক্ষেত্রে বায়োসিকিউরিটি মেনে চলতে হবে।
একটা খামারের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সকল জৈব–নিরাপত্তা গুলো জেনে নিই–
ঘর প্রস্তুতের ক্ষেত্রেঃ
- খামার ঘরটি যথাসম্ভব বসতবাড়ি থেকে দূরে হওয়া উচিত।
- একটি খামার থেকে অন্য একটি খামারের দূরত্ব কমপক্ষে ১০০ মিটার হওয়া উচিত।
- খামার ঘরটি অবশ্যই পূর্ব–পশ্চিম বরাবর লম্বা হতে হবে।
- ঘরের উত্তর ও দক্ষিণ দিক খোলা রাখতে হবে।
- খামারের আশে–পাশে কোনো জলাশয় বা ডোবা থাকা উচিত নয়।
- ঘরে পর্যাপ্ত আলো–বাতাস প্রবেশের ব্যবস্থা থাকা।
- খামারে প্রবেশের পথে (দরজার সামনে) একটি ফুটবাথ তৈরি করা। ফুটবাথ হচ্ছে খামারের প্রবেশ পথে একটি ছোট বাথ ট্যাব বা কুয়ার মত পাকা করে তৈরি করা এবং সেখানে সবসময় জীবাণুনাশক মিশ্রিত পানি পূর্ণ থাকবে। যখন কেউ খামারে প্রবেশ করবে তখন যেন সে তার পা এই পানিতে ডুবিয়ে তারপরে খামারে প্রবেশ করে। এতে খামারি বা দর্শণার্থীর পায়ের সাহায্যে খামারে কোনো জীবাণু প্রবেশ করতে পারবে না।
দর্শণার্থী প্রবেশের ক্ষেত্রেঃ
- খামারে বিনা প্রয়োজনে বাইরের কাউকে প্রবেশ করতে দেয়া উচিত না। এতে যেকোনো সময় জীবাণুর আক্রমন হতে পারে।অনেক সময় সৌজন্যতার জন্য আমরা বন্ধু–বান্ধব বা আত্মীয়–স্বজনদের খামারে ঢুকতে দেই। কিন্তু এটা খামারের জৈব–নিরাপত্তার ক্ষেত্রে করা উচিত নয়।
- যদি বিশেষ কাউকে ঢুকতে দিতে হয় তবে ঢোকার আগে অবশ্যই তাকে ভালভাবে জীবাণু নাশক স্প্রে করে নিতে হবে। ফুটবাথে পা ডুবিয়ে তারপরে খামারে ঢুকাতে হবে।
- বেশি ভাল হয় যদি খামারে কাজ করার জন্য আলাদা পোশাক এবং আলাদা জুতা বা স্যান্ডেল থাকে। যখন কেউ খামারে প্রবেশ করবে তখন সেই পোশাক পড়ে প্রবেশ করবে এবং এই পোশাক গুলা নিয়মিত জীবানুমুক্ত রাখতে হবে।
বাচ্চা ছাড়ার আগে ঘর জীবানুমুক্তকরণঃ
- খামারে বাচ্চা আনার আগে খামার টি ভালকরে ডিটারজেন্ট বা জীবানুনাশক মিশ্রিত পানি দিয়ে ধুয়ে ভাল করে শুকিয়ে তারপরে বাচ্চা আনতে হবে।
- ঘরের মেঝেতে ব্যবহৃত লিটারের উপরে জীবাণুনাশক স্প্রে করে নিতে হবে।
খাবার ও পানির পাত্র জীবানুমুক্তকরণঃ
- বাচ্চা আনার আগেই খাবার ও পানির পাত্র গুলা জীবানুনাশক মিশ্রিত পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে।
- এরপরে পাত্র গুলা ভাল করে রোদে শুকিয়ে নিতে হবে।
বাচ্চা পরিবহনের ক্ষেত্রেঃ
- বাচ্চা পরিবহন করে খামার ঘরে ঢুকানোর আগে বাচ্চার কার্টুনগুলো জীবাণুনাশক স্প্রে করে তারপরে সেডে ঢুকানো উচিত।
- সম্ভব হলে যে পরিবহনে সে স্থানে করে নিয়ে আসবেন সেখানে ও জীবাণুনাশক স্প্রে করে নিন।
- বাচ্চা ব্রুডারে ছেড়ে দেয়ার পরে বাচ্চার কার্টুন গুলো জমিয়ে না রেখে সরাসরি আগুনে পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
সারাবছর জুড়েঃ
- প্রতিদিন খামারের খাবার ও পানির পাত্র পরিস্কার করতে হবে।
- পাত্রের তলায় পড়ে থাকা ময়লাযুক্ত খাবার সরিয়ে নিতে হবে।
- পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত পানি সরবারাহ করতে হবে।
- প্রতি ২–৩ দিন অন্তর অন্তর খামারের চারিপাশে জীবাণুনাশক স্প্রে করতে হবে।
- যেসকল জীবাণুনাশক গুলা পাখির ক্ষতি করে না এমন জীবাণুনাশক দিয়ে খামারের ভিতরে ও মাঝে মাঝে স্প্রে করা ভাল।
- প্রতি সপ্তাহে প্রয়োজনে একাধিক বার লিটারের উপরের ময়লা পরিস্কার করা উচিত। লিটার যেন জমাট না বেঁধে যায় সেজন্য প্রতিদিন লিটার হ্যাচড়া দিয়ে টেনে উলট-পালট করে দিতে হবে।
এছাড়া খামারে ব্যবহৃত সকল যন্ত্রপাতি নিয়মিত জীবানুমুক্ত রাখা উচিত।
বিঃদ্রঃ খামারে কোনো কারনে কোনো মুরগি মারা গেলে তা এদিক সেদিকে না ফেলে দিয়ে একটা নির্দিষ্ট গর্ত করে সেখানে মাটি চাপা দিন। এতে ওই মৃত মুরগি থেকে রোগ-জীবাণু ছড়াতে পারবে না। এই বিষয় টা একটু গুরুত্ব সহকারে দেখা উচিত।
ব্রয়লার ফিডের পুষ্টিমানঃ
পুষ্টিমান | ব্রয়লার স্টার্টার | ব্রয়লার গ্রোয়ার | ব্রয়লার ফিনিশার |
আর্দ্রতা (সর্বোচ্চ) % | ১২ | ১২ | ১২ |
ক্রুড প্রোটিন (সর্বনিম্ন) % | ২২ | ২১ | ২০ |
ক্রুড ফাইবার (সর্বোচ্চ) % | ৫ | ৫ | ৫ |
ক্রুড ফ্যাট (সর্বনিম্ন) % | ৫ | ৫ | ৪ |
অ্যাঁশ (সর্বনিম্ন) % | ৮ | ৮ | ৮ |
ক্যালসিয়াম (সর্বনিম্ন) % | ১ | ১ | ১ |
ফসফরাস (সর্বনিম্ন) % | ০.৪৫ | ০.৪৫ | ০.৪৫ |
বিপাকীয় শক্তি (কিলোক্যালরি/কেজি) | ৩০০০ | ৩০৫০ | ২৯০০ |
খাদ্যের ধরণ | ক্রাম্বল | পিলেট | পিলেট |
মুরগির বয়স | ১-১৪ দিন পর্যন্ত | ১৫-২৪ দিন পর্যন্ত | ২৫ দিন থেকে বিক্রয় পর্যন্ত |
ফিড সংরক্ষণে কিছু নির্দেশনাঃ
ফিডের কোয়ালিটি বজায় রাখতে এবং সর্বোচ্চ ভাল ফলাফল পেতে সঠিকভাবে ফিড সংরক্ষণ করা একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। নিচে ফিড সংরক্ষণে কিছু সাধারণ পরামর্শ তুলে ধরা হল-
- ফিড শুষ্ক ও ঠান্ডা স্থানে সংরক্ষণ করতে হবে। কোন অবস্থাতেই ভিজা বা স্যাঁতস্যাঁতে স্থানে সংরক্ষণ করা যাবে না।
- ফিডের ব্যাগ সরাসরি ফ্লোরে সংরক্ষণ করা যাবে না। ফ্লোর থেকে ৬-১২ ইঞ্চি উপরে কাঠের মাচা, ডায়াস, চৌকি করে রাখতে হবে।
- ফিডের স্তুপ ঘরের দেয়াল থেকে দূরে রাখতে হবে।
- ফিড পরিবহনের ক্ষেত্রে অবশ্যই পরিবেশক বা খামারিকে পানি প্রতিরোধক পর্দা, ত্রিপল দিয়ে ভালভাবে ঢেকে ও বেঁধে ফিড পরিবহন করতে হবে।
- ফিড যে ঘরে সংরক্ষণ করা হবে সেজায়গা অবশ্যই কীটনাশক ইঁদুর, ছুঁচো, চিকা মুক্ত রাখতে হবে।
- বর্ষাকালে ফিড পরিবহনে সতর্ক থাকতে হবে। ফিডের ব্যাগে যেন সরাসরি কোনভাবে পানি না পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
- ফিডের ব্যাগে হুক ব্যবহার করা যাবে না।
- ফিডের গুদাম ঘরে পর্যাপ্ত বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
- ফিড সংরক্ষণের আগে অবশ্যই ব্যাগের গায়ে/ব্যাগের সেলাই মুখে উৎপাদনের তারিখ চেক করে নিতে হবে।
- ফিড উৎপাদনের তারিখ হতে সর্বোচ্চ ৪৫ দিনের মধ্যে ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
- ফিডের ব্যাগের মুখ খোলার পর দ্রুততম সময়ের মধ্যে খাদ্য ব্যবহার করা উত্তম।
- ফিডের ব্যাগের মুখ খোলার পরে প্রয়োজনীয় খাদ্য নেয়ার পরে অবশিষ্ট থাকলে ব্যাগের মুখ ভালভাবে মুড়িয়ে বন্ধ করে দেয়া উচিত।
কোন অবস্থাতেই খাদ্যে ফাঙ্গাস দেখা দিলে তা প্রাণিকে খাওয়ানো যাবে না।
লেখকঃ ডাঃ শ্রাবণ হাসান সজল
ডিভিএম, এম এস ইন প্যাথলজি (পবিপ্রবি)